প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আধুনিক পাওয়ার টুলস আমাদের কর্মশালার কাজকে করেছে অনেক বেশি সহজ এবং আরামদায়ক। সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষও উন্নত দেশগুলোর মতোই আধুনিক পাওয়ার টুলস ব্যবহার শুরু করেছে। এসব টুলসের সাহায্যে সহজেই কাঠ, স্টিল, গ্লাস, সিরামিকের মতো বস্তু নতুন আকারে রূপান্তর করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আধুনিক টুলস কর্মীদের কম সময়ে বেশি কাজ করতে সাহায্য করে, যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনশীলতা বাড়ছে এবং বাংলাদেশ দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে বিশ্বমঞ্চে স্বীকৃতি অর্জন করছে। পাশাপাশি, ব্যক্তিগত কাজের ক্ষেত্রেও পাওয়ার টুলসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। চলুন দেখে নিই কয়েকটি জনপ্রিয় পাওয়ার টুলস, যেগুলো আপনার কাছে থাকা উচিত:

১. ড্রিল মেশিন

ড্রিল মেশিন কর্মশালার সবচেয়ে ব্যবহৃত টুলগুলোর মধ্যে একটি। বাসা থেকে শুরু করে কর্মশালার সব কাজেই ড্রিল মেশিনের প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য ড্রিল মেশিনকে চার ভাগে ভাগ করা যায়:

  • বেবি ড্রিল: ছোটখাটো বাসার কাজের জন্য যেমন কাঠ বা লোহার সিটে স্ক্রু লাগাতে ব্যবহৃত হয়।
  • নরমাল হ্যামার ড্রিল: বাড়িতে হালকা কাজের জন্য যেমন দেয়ালে হুক লাগানো বা স্ক্রু বসানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • প্রফেশনাল হ্যামার ড্রিল: ভারী কাজের জন্য, যেমন কংক্রিটের ছাদ বা পিলারে ছিদ্র করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • কর্ডলেস ড্রিল: ব্যাটারি চালিত ড্রিল মেশিন যা কাঠ বা দেয়ালে স্ক্রু লাগানোর মতো কাজে ব্যবহৃত হয়।

২. সার্কুলার সো

সার্কুলার সো দ্রুত ও নিখুঁতভাবে কাঠ, প্লাইউড, স্টিল বা পাইপ কাটার জন্য ব্যবহৃত হয়। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এখন এই টুলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সার্কুলার সো দিয়ে কাঠ, প্লাস্টিক এবং লোহা কাটার কাজ করা যায়।

৩. এঙ্গেল গ্রাইন্ডার

বাংলাদেশের নির্মাণ খাতে এঙ্গেল গ্রাইন্ডারের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এটি টাইলস, মার্বেল, সিরামিক, পাইপ কাটার জন্য এবং কাঠ ও স্টিলের পলিশিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ব্লেড ব্যবহার করা যায়।

৪. ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ

গাড়ির টায়ার পরিবর্তন এবং নাট-বল্টু খোলার কাজে ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত অটোমোটিভ শিল্পে জনপ্রিয়। ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ দুটি ভাগে বিভক্ত: কর্ডেড এবং কর্ডলেস। কর্ডেড রেঞ্চ সহজে বহনযোগ্য ও দ্রুত কাজ করতে সক্ষম, আর কর্ডলেস রেঞ্চ টাইট স্পেসে কাজের জন্য উপযোগী।

৫. ইমপ্যাক্ট ড্রাইভার

ইমপ্যাক্ট ড্রাইভার সাধারণত কাঠ, মেটাল বা দেয়ালে স্ক্রু লাগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ইমপ্যাক্ট রেঞ্চের মতো দেখতে হলেও মূলত স্ক্রু লাগানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।

৬. রেসিপ্রোকেটিং সো

কাঠ, প্লাইউড, মেটাল বা পিভিসি কাটার ক্ষেত্রে রেসিপ্রোকেটিং সো ব্যবহৃত হয়। ফার্নিচার এবং নির্মাণ কাজে এই সো ব্যবহার করা হয়, এবং এর ব্লেড পরিবর্তন করে বিভিন্ন ঘনত্বের বস্তু কাটা যায়।

৭. ডাস্ট ব্লোয়ার

পিসি, এয়ার কন্ডিশনার বা সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশের ভিতরে জমা ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করতে ডাস্ট ব্লোয়ার অত্যন্ত কার্যকর। এটি হাত দিয়ে পরিষ্কার করা ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো সহজ করে তোলে।

৮. ইলেকট্রিক চেইন সো

গাছের গুড়ি কাটার কাজে ইলেকট্রিক চেইন সো ব্যবহৃত হয়। এটি পেট্রোল চালিত চেইন সো-এর তুলনায় হালকা, কম শব্দ করে এবং দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম।

৯. ওয়েল্ডিং মেশিন

মেটাল বা স্টিলের জিনিস জোড়া লাগানোর জন্য ওয়েল্ডিং মেশিন বাংলাদেশে বহুকাল ধরেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন দেশে উন্নতমানের আধুনিক ওয়েল্ডিং মেশিন সহজলভ্য, যা দামে সাশ্রয়ী এবং বেশি কার্যকর।

১০. জিগ সো

কাঠ ও মেটাল বস্তু নির্দিষ্ট আকৃতিতে কাটার জন্য জিগ সো ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে, শৌখিন ফার্নিচার ও পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে এটি কার্যকর। কাঠ ও মেটাল কাটার জন্য আলাদা আলাদা ব্লেড ব্যবহৃত হয়।

১১. হ্যান্ডিক্র্যাফট ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডার

কাঠে খোদাই করে নকশা তৈরি বা শৌখিন পণ্য তৈরির জন্য হ্যান্ডিক্র্যাফট ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডার ব্যবহার করা হয়। এটি আকারে ছোট, হালকা এবং সহজে বিভিন্ন নকশা তৈরি করা সম্ভব।

সঠিক টুল বাছাই করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

  1. কাজের ধরন নির্ধারণ করুন: প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করুন আপনি কোন ধরনের কাজ করছেন। কাঠের কাজ, মেটালের কাজ, ইলেকট্রিক্যাল বা মেকানিক্যাল কাজ অনুযায়ী টুলের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হতে পারে।
  2. টুলের ক্ষমতা ও কার্যকারিতা বিবেচনা করুন: টুলের শক্তি, গতির নিয়ন্ত্রণ, এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন ব্যাটারি বা বৈদ্যুতিক অপশন ইত্যাদি বিবেচনা করুন। কাজের জন্য অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োজন হলে শক্তিশালী টুল বেছে নিন।
  3. বাজেট: আপনার বাজেট অনুযায়ী টুল নির্বাচন করুন। দামের সাথে মানের সম্পর্ক রয়েছে, তবে সবসময় সেরা মানে বেশি দাম লাগে না।
  4. ব্র্যান্ড ও রিভিউ দেখুন: নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড